প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান কিন্তু কীভাবে আবেদন করবেন তা জানেন না? এখন আর আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই! এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য ও আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ধাপগুলো জানাবো। সেহেতু লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। যাতে আপনি সহজেই এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রথমেই আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে জেনে নিবো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কী?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন হলো প্রবাসীদের জন্য বিশেষভাবে প্রণীত একটি আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি। এই লোন প্রবাসীদের জীবনমান উন্নত করতে ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে এই লোন সেবা প্রদান করা হয়। এই লেখায় আমরা ধাপে ধাপে এই লোন সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরব।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের জন্য অনলাইন আবেদন
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের জন্য অনলাইন আবেদনের কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু করা হয়নি। লোন পেতে হলে আপনাকে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যে আপনি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে লোন অনুমোদনের খবর পাবেন। এখন চলুন বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের প্রকারভেদ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গ্রাহকদের সুবিধার জন্য বর্তমানে চার ধরনের লোন প্রদান করছে। এগুলো হলো:
- অভিবাসন ঋণ
- অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
- পুনর্বাসন ঋণ
- বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
নিচে এই চারটি লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. অভিবাসন ঋণ
বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে এই লোন সহায়তা করে। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসাধারী ব্যক্তিরা এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই লোনের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা (পরিবর্তনশীল) পাওয়া যায়। সুদের হার মাত্র ৯%।
২. অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
বৈধ ভিসা ও পাসপোর্টধারী প্রবাসীরা বিদেশে থাকাকালীন বা দেশে ফিরে এই লোন নিতে পারেন। এই লোনের মাধ্যমে জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ও জামানতসহ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা (পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান) এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
৩. পুনর্বাসন ঋণ
দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে ব্যবসা বা প্রকল্প শুরু করতে চাইলে এই লোন সহায়ক। এই লোনের মাধ্যমে জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ও জামানতসহ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সুদের হার ৯% (পরিবর্তনশীল)।
৪. বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
২০২০ সালের করোনা মহামারীর পর থেকে এই লোন চালু হয়েছে। যেসব প্রবাসী করোনার সময় দেশে ফিরেছেন বা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই লোনের মাধ্যমে জামানত ছাড়া ৩ লাখ টাকা ও জামানতসহ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। গ্রুপ লোনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পাওয়া যায়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
লোন পেতে নিম্নলিখিত নথিপত্র জমা দিতে হবে:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি।
- বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি।
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র (ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার নাগরিক সনদ)।
- সদ্য তোলা ৪টি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- দুজন জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্র, ১টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র।
- জামিনদারের তিনটি স্বাক্ষরিত ব্যাংক চেক।
- ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- ব্যবসা বা প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও গত এক বছরের আয়-ব্যয়ের বিবরণী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
অন্য কোনো নথির প্রয়োজন হলে ব্যাংক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আপনাকে জানাবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের যোগ্যতা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে:
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
- ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর, কিছু ক্ষেত্রে ২১ বছর।
- আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট শাখার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- পূর্বে কোনো ব্যাংক বা এনজিওতে ঋণ খেলাপি হওয়া চলবে না।
- দুজন আর্থিকভাবে সচ্ছল জামিনদার থাকতে হবে।
- অভিবাসন ঋণের জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা প্রয়োজন।
- পুনর্বাসন ঋণের জন্য ব্যবসা/প্রকল্পের বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার পদ্ধতি
লোন পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র সংগ্রহ করুন।
- নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় গিয়ে কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করুন।
- ব্যাংক কর্মকর্তা আপনাকে আবেদনপত্র প্রদান করবেন।
- আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিন।
- ব্যাংক আপনার নথিপত্র যাচাই করে লোন অনুমোদন করবে।
- লোন অনুমোদিত হলে এসএমএস বা কলের মাধ্যমে জানানো হবে।
- অনুমোদনের পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লোনের অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা
লোন নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করুন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক পরিকল্পনা করে লোনের জন্য আবেদন করুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের সুবিধা
- সহজ শর্তে দ্রুত লোন প্রদান।
- অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কম সুদের হার।
- জামানত ছাড়া এবং জামানতসহ বড় অঙ্কের লোন সুবিধা।
- পর্যাপ্ত সময়ে ঋণ পরিশোধের সুযোগ।
আরও জানতে পারেনঃ উদ্দীপন এনজিও লোন পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
শেষ কথা
এই লেখার মাধ্যমে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি যদি প্রবাসী হিসেবে বিদেশে যেতে চান বা দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আপনার জন্য সর্বোত্তম হতে পারে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।