কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় ২০২৫ সালে

কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় জানেন কি? বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কৃষি খাত। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ এই খাত থেকে আসে ও  ৪০ শতাংশেরও বেশি জনগোষ্ঠী এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বীজ, সার, সেচ ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতির মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়ে অর্থের অভাবে কৃষকরা প্রায়ই পিছিয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এর মতো একটি বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংক এসে কৃষকদের হাত শক্ত করেছে।

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি মূলত কৃষি এবং গ্রামীণ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ৬৪টি জেলায় ৯৮৪টি শাখা এবং ৮৭টি সাব-ব্রাঞ্চের মাধ্যমে এটি লক্ষ লক্ষ কৃষককে ঋণ সুবিধা প্রদান করছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বিকেবির মোট কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৭,৮০০ কোটি টাকা। যা কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এই ঋণগুলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-২ এর সাথে যুক্ত যা শূন্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ছোট কৃষক যিনি ধান চাষে বিনিয়োগ করতে চান কিন্তু ব্যাংকের জটিলতায় আটকে পড়েন বিকেবি তার জন্য সহজ পথ তৈরি করেছে।

আরও জানতে পারেনঃ পপি এনজিও লোন পদ্ধতি 

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক ১ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি নতুন কৃষককে ঋণ প্রদান করে। যা কৃষি খাতের গতি ত্বরান্বিত করেছে।  আপনি যদি কৃষি খাতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে চান বা উৎপাদন বাড়াতে চান তাহলে এই ব্যাংকের সেবা আপনার জন্যই। এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব কীভাবে কৃষি ব্যাংক আপনার কৃষি কাজের যাত্রাকে সহজ করে তুলতে পারে।

কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়: একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা

কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় ? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে ঋণের ধরন, কৃষকের জমির আকার এবং জামানতের উপর। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক জামানত ছাড়াই ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে, যা ছোট কৃষকদের জন্য আদর্শ। জামানত সহ ঋণের পরিমাণ ১ লাখ থেকে শুরু হয়ে ১০ লাখ বা তারও বেশি হতে পারে বিশেষ করে জমি বন্ধক রাখলে। উদাহরণস্বরূপ, ফসল চাষের জন্য সাধারণত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত যখন এসএমই খাতে ৫০ লাখ পর্যন্ত যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে এসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঋণগুলো স্বল্প সুদে প্রদান করা হয় ও ফেরতের সময়কাল ফসলের ঋতু অনুসারে নির্ধারিত হয় সাধারণত ৬ মাস থেকে ৫ বছর। ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে, এই ঋণগুলো কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে, এবং কৃষকরা সহজ শর্তে এর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

কৃষি ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কৃষি লোন অফার করে, যা কৃষকদের নির্দিষ্ট চাহিদা মেটায়। নিচে একটি ছকে প্রধান প্রকারগুলোর সারাংশ এবং লোনের পরিমাণ দেওয়া হলো:

লোনের প্রকার বিবরণ লোনের পরিমাণ (টাকা) সময়কাল
ফসল ঋণ ধান, গম ইত্যাদি ফসল চাষের জন্য ৫,০০০-৫ লাখ ৬-১২ মাস
এসএমই ঋণ কৃষি-ভিত্তিক ছোট ব্যবসা উন্নয়নের জন্য ১ লাখ-৫০ লাখ ১-৫ বছর
পশুসম্পদ ঋণ গরু, ছাগল পালন বা দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য ২০,০০০-৫ লাখ ১-৩ বছর
মৎস্যচাষ ঋণ পুকুর ভাড়া বা যন্ত্র ক্রয়ের জন্য ৩০,০০০-৩ লাখ ১-২ বছর
পুনরুদ্ধার ঋণ দুর্যোগকালীন ক্ষতিপূরণের জন্য ১০,০০০-২ লাখ ৬-১৮ মাস

এই প্রকারগুলো কৃষকদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ছোট কৃষক ফসল ঋণ নিয়ে বীজ কিনতে পারেন, যখন বড় কৃষক এসএমই ঋণ দিয়ে যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারেন। 

কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার যোগ্যতা

কৃষি ব্যাংক লোনের জন্য যোগ্যতা সহজ এবং কৃষককেন্দ্রিক। আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। কৃষি খাতে জড়িত হতে হবে, যেমন জমির মালিক বা ভাড়াটিয়া কৃষক। ন্যূনতম জমির আকার (০.০২ হেক্টর) এবং আয়ের প্রমাণ লাগবে। গ্রুপ লোনের ক্ষেত্রে ৫-১০ জনের গ্রুপ গঠন করতে হয়। সরকারি নীতিমালা অনুসারে, নারী কৃষক এবং ছোট কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যারা আগে লোন নিয়ে সময়মতো ফেরত দিয়েছেন, তাদের পরবর্তী লোনের পরিমাণ বাড়ানো হয়। এই যোগ্যতা পূরণ করে যেকোনো কৃষক আবেদন করতে পারেন।

আরও জানতে পারেনঃ ১ লক্ষ টাকা লোন নিতে চাইলে জানুন 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

লোন আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এর ফটোকপি।
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
  • জমির দলিল বা ভাড়া চুক্তির কপি।
  • আয়ের প্রমাণ (ফসলের বিল বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
  • গ্রুপ সদস্যদের NID এবং ছবি (গ্রুপ লোনের ক্ষেত্রে)।
  • প্রকল্পের পরিকল্পনা (ফসল চাষের বাজেট)।

এগুলো সঠিকভাবে জমা দিলে আবেদন দ্রুত অনুমোদিত হয়।

কৃষি ব্যাংক লোনের আবেদন প্রক্রিয়া

কৃষি ব্যাংক লোনের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও ডিজিটালভাবে উপলব্ধ। প্রথমে নিকটস্থ শাখায় যান বা BKB Janala অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অ্যাপে লোন অপশন সিলেক্ট করে ফর্ম পূরণ করুন। কাগজপত্র আপলোড করুন; ব্যাংক কর্মকর্তারা জমি এবং প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। ৭-১৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন হয়। অনুমোদনের পর টাকা হাতে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পৌঁছে যায়। অফলাইন প্রক্রিয়ায় শাখায় ফর্ম জমা দিন। এই পদ্ধতি কৃষকদের সময় বাঁচায় এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

কৃষি ব্যাংক লোন বিতরণ পদ্ধতি

লোন বিতরণ ঐতিহ্যগত এবং আধুনিক উভয় পদ্ধতিতে হয়। ঐতিহ্যগতভাবে শাখায় হাতে টাকা বা চেক দেওয়া হয়। ডিজিটালভাবে বিকাশ বা অন্যান্য MFS অ্যাপে ট্রান্সফার করা যায়। ফেরত সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে বা যা ফসল বিক্রির পর পরিশোধ করা যায়। ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং ও এটিএম সার্ভিসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং সহজ। এই পদ্ধতি কৃষকদের জীবনকে আরও সহজ করে।

আরও জানতে পারেনঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক স্যালারি লোন

কৃষি ব্যাংক লোনের সুদের হার

কৃষি ব্যাংক লোনের সুদের হার সাশ্রয়ী যেমনঃ ফ্ল্যাট ৮-১০% এবং রিডুসিং ১২-১৫%। ফসল ঋণের জন্য ৮.জেম ও যখন অন্যান্য ফসলের জন্য ১২%। মৎস্যচাষের জন্য ১২%। কোনো লুকানো চার্জ নেই এবং ফেরত দিলে ক্রেডিট স্কোর ভালো হয়। সরকারি নীতিমালা অনুসারে, দুর্যোগকালে সুদ ছাড় দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১ লাখ টাকার লোনে মাসিক কিস্তি ২,০০০ টাকা। এই সুদের হার কৃষকদের বোঝা কমায়। 

কৃষি ব্যাংক লোনের সুবিধা

কৃষি ব্যাংক লোনের সুবিধাগুলো অসাধারণ। লোনের পাশাপাশি সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট (৪-৬% লভ্যাংশ), ক্রেডিট কার্ড ও বীমা সুবিধা পাওয়া যায়। কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং কৃষি পরামর্শদাতা উপলব্ধ। নারী কৃষকদের জন্য বিশেষ স্কিম, যেমন অতিরিক্ত ঋণ পরিমাণ। এসএমই লোনের মাধ্যমে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প শুরু করা যায়। এই সুবিধাগুলো কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করে।

কৃষি ব্যাংকের শাখাসমূহ

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৯৮৪টি শাখা দেশজুড়ে ছড়ানো। প্রধান জেলাগুলোতে যেমন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট। নিচে কয়েকটি উদাহরণ:

  • ঢাকা শাখা: মতিঝিল, ঢাকা।
  • রাজশাহী শাখা: নাটোর রোড, রাজশাহী।
  • চট্টগ্রাম শাখা: গেটেড, চট্টগ্রাম।

সম্পূর্ণ তালিকা ব্যাংকের অফিস থেকে পাওয়া যায়।

সফলতার গল্প

এক গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন ৩ লাখ টাকা ফসল ঋণ নিয়ে ধান চাষ শুরু করেন। আজ তার উৎপাদন দ্বিগুণ, এবং পরিবারের আয় বেড়েছে। এমন হাজারো গল্প বিকেবির সাফল্য প্রমাণ করে।

আরও জানতে পারেনঃ ব্র্যাক ব্যাংক স্যালারি লোন 

শেষ কথা

কৃষি ব্যাংক লোন কৃষকদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এটি শুধু টাকা দেয় না, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। আজই আবেদন করুন এবং কৃষি খাতে সাফল্য অর্জন করুন। প্রত্যাশা করি আজকেরই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে কৃষি ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত  তথ্য জানাতে পেরেছি।তবে কৃষি ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত আপনার মতামতের উত্তর জানাবো। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *